ইন্টারনেট সেবাকে মৌলিক মানবাধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে আইন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী। একই সঙ্গে এ সেবাকে টেকসই ও সাশ্রয়ী করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৪ নভেম্বর) ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ প্রতিশ্রুতি দেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান। রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনারের আয়োজন করে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ (টিআরএনবি)।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আজকের দিনে ইন্টারনেট সেবা মৌলিক মানবাধিকার হওয়া উচিত। এ নিয়ে আইন করাটাও জরুরি। কখনোই ইন্টারনেট বন্ধ হওয়া উচিত নয়। এ সেবা টেকসই ও সাশ্রয়ী করতে যা করার, তার সবই করছে বিটিআরসি।
এমদাদ উল বারী বলেন, ট্রান্সমিশন আলাদা করার ধারণা থেকে এনটিটিএনের জন্ম। এখন এনটিটিএন সমস্যা হিসেবে অভিযুক্ত। আসলে রাস্তার সঙ্গে এনটিটিএনের তুলনা করাটা যৌক্তিক নয়। কেননা সড়ক থেকে কোনো আরওআই আসে না। ইন্টারনেটের কেন্দ্রে রয়েছে এনটিটিএন। সেজন্য সরকার সর্বাত্মক সহায়তা করেছে।
আরও পড়ুন
ডুয়াল ব্যান্ড সাপোর্ট না করা রাউটার উৎপাদন-আমদানি নিষিদ্ধ হচ্ছে
তিনি বলেন, কোথাও কোথাও মাত্রা ছাড়িয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। গত ১০ বছরে উপজেলা হেডকোর্টারে পৌঁছেছে। কিন্তু এ পৌঁছানোর ধরনটা কী? অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত পপ নেই। ফাইবার টু হোম ঢাকা বা ঢাকার বাইরে কোথাও কাজ করেনি। কেননা আইএসপি প্রতিষ্ঠানরা এটাকে সাশ্রয়ী মনে করে না। ফলে সরকার অনেক কিছু করলেও সত্যিই কি নেটওয়ার্ক পৌঁছেছে?
সামিটের ৫০ শতাংশ এবং ফাইবার অ্যাট হোমের ২৭ শতাংশ ক্যাবল আন্ডারগ্রাউন্ড করা হয়েছে জানিয়ে এমদাদ উল বারী বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কখনো কমানো সম্ভব নয়। এর সমাধান হলো ব্রডব্যান্ড। এজন্য আমরা একটি ব্রডব্যান্ড পলিসি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগামীতে আমাদের ডার্ক কোরের প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। এটার প্রাপ্যতা নিয়ে মোবাইল অপারেটররা সামনের দিনে সংকটে পড়তে পারে। এজন্য আমাদের টেকসই পথ খুঁজতে হবে।
মোবাইল অপারেটর ও এনটিটিএনের ওপর আস্থা রেখেও ফল আসেনি অভিযোগ করে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলো ডাটা রেভ্যুলেশনে এখন ডিজিটাল সেবাদাতা হিসেবে পরিচিত হতে চায়। কিন্তু ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম পানির দামে নেমে না আসলে এটা সম্ভব নয়। এজন্য নেটওয়ার্ক সাসটেইন করতে হবে। তাই আমরা অ্যাসেট লাইট মডেলে যেতে পারি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবির সাবেক সভাপতি রাশেদ মেহেদী। সংগঠনের সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে। এ নেটওয়ার্কের ফলে দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ইন্টারনেটভিত্তিক সব সেবা ছড়িয়ে পড়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, অপতথ্যের অজুহাতে আমরা কোনোভাবেই ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারি না। এজন্য আইন করা দরকার। টেলিকমের অবকাঠামো, কনটেন্ট ও প্রতিযোগিতা তিনটি বিষয় নিয়ে পলিসি পর্যালোচনা করে ঢেলে সাজানো উচিত।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার, টেলিটকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল মাবুদ চৌধুরী, ফাইবার অ্যাট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক সিদ্দিকী, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডের চিফ নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট (সিএনএ) ফররুখ ইমতিয়াজ, রবির করপোরেট অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহদ আলম, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান এমটব মহাসচিব মো. জুলফিকার, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক প্রমুখ।
এএএইচ/এসআইটি/এমএস