ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। তার নেতৃত্বে মার্কিন প্রশাসন আবারো এমন নীতির দিকে ঝুঁকতে পারে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতিতে চমকপ্রদ পরিবর্তন ঘটাবে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে নেওয়া “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিল, যার প্রভাব বিভিন্ন দেশ বিশেষভাবে অনুভব করেছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এই পরিবর্তন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ট্রাম্পের নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ বা সুযোগ তৈরি করতে পারে, তা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে, সরাসরি ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ট্রাম্পের সম্ভাব্য মনোভাব থেকে কীভাবে প্রভাবিত হতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন বৈদেশিক নীতির ভিত্তি ছিল “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি, যা জাতীয় স্বার্থকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত হয়েছিল। এই নীতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবদানকে হ্রাস করা, যখন মার্কিন অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় জাতিসংঘ, ন্যাটো, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, এবং ইরান পরমাণু চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর সমালোচনা করা হয়েছিল। তিনি এই সংস্থাগুলিকে এমন ব্যয়বহুল অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, যা মার্কিন করদাতাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে। বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের মনোভাব ছিল প্রোটেকশনিজম বা রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতি, যার ফলশ্রুতিতে তিনি চীনসহ বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন। চীনের উপর শুল্ক আরোপ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় অগ্রগতি থামানোর লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে চীন-মার্কিন সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল হয়ে ওঠে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ট্রাম্পের এই ধরনের নীতি অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথেও সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করেছিল। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে, ট্রাম্প ঐতিহ্যবাহী মার্কিন পন্থার চেয়ে ভিন্ন পথে হেঁটেছিলেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাথে সরাসরি বৈঠক করেছিলেন, যা আগে কল্পনাও করা হয়নি। যদিও এই প্রচেষ্টা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে পারেনি, এটি বিশ্ব কূটনীতিতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রশাসন ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংকটে ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে মার্কিন অবস্থান আরও একপাক্ষিক করে তুলেছিল। এছাড়া ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই সব পদক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশ, এই পরিবর্তনগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব অনুভব করতে বাধ্য হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নতুন করে প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির বেশ কিছু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনর্গঠিত করেছিল। ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি বাংলাদেশের জন্য কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছিল, এবং একই ধরনের নীতিগত পদক্ষেপ দ্বিতীয় মেয়াদেও বাংলাদেশকে নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষভাবে তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল, যা মার্কিন বাজারে প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর একটি। ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক নীতি ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেছিল, যার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। একই ধরনের প্রোটেকশনিস্ট পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি খাতে বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, ট্রাম্প যদি আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন বা আমেরিকার বাজারে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেন, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের রক্ষণশীল বাণিজ্য নীতি বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্যিক সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য চীন থেকে সরবরাহ চেইন স্থানান্তরের প্রয়াস নিতে পারে, এবং সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ উৎপাদন শিল্পের বিকাশে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্যান্য খাতে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। তদুপরি, ট্রাম্পের প্রশাসন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌশলগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিলে দেশটির অগ্রাধিকার ভিত্তিক শিল্পখাতগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে। বাণিজ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি, মার্কিন বিনিয়োগ সম্পর্কেও কিছু নির্দিষ্ট ঝুঁকি এবং সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। একদিকে, বাংলাদেশের বাজারকে স্থিতিশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক মনে হলে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে যদি ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী কৌশলগত উপস্থিতি গড়ে তুলতে চায়। অন্যদিকে, যদি মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র সংক্রান্ত ইস্যুতে মার্কিন কংগ্রেস এবং প্রশাসনের কূটনৈতিক চাপ বাড়ে, তবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ বাংলাদেশের প্রতি কূটনৈতিক মনোভাব কঠোর করার ইঙ্গিত দিতে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে। এই সকল বিষয় বিবেচনা করে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য কীভাবে কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক সুবিধা অর্জন করা যায় এবং কীভাবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আগের প্রেসিডেন্টদের তুলনায় ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিল। প্রথম মেয়াদে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুতর সংকট হিসেবে দেখার পরিবর্তে একে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছিলেন। ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, যা ছিল এক বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য। তার নীতি “আমেরিকা ফার্স্ট” লক্ষ্য পূরণে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং তেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো শক্তির ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর দিকে ঝুঁকেছিল। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা প্যারিস চুক্তি থেকে পুনরায় দূরে থাকার সম্ভাবনা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র দূরে থাকলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টায় এক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও রাজনৈতিক শক্তির অভাব ঘটবে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক তহবিল এবং সহায়তার সম্ভাব্য পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অর্থ বাংলাদেশের জন্য পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু প্রতিরোধী কৃষি ব্যবস্থা এবং উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলের জন্য অর্থায়ন কমিয়ে দিলে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নে পদক্ষেপ নিতে অনাগ্রহী থাকে, তবে অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকেও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা পালনে উদাসীনতা দেখা দিতে পারে। এটি বৈশ্বিক জলবায়ু সংহতি দুর্বল করবে এবং বিশেষত বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং, ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দুর্বল হলে বাংলাদেশ মারাত্মক পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে পড়তে পারে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের জন্য জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয়টিকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল, যা ট্রাম্প প্রশাসনের শেষের দিকে এবং পরবর্তী বাইডেন প্রশাসনের আমলে কূটনৈতিক আলোচনার একটি বড় অংশ হয়ে ওঠে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি মানবাধিকার ইস্যুতে তার প্রশাসনের নীতি অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়তে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় মানবাধিকার ইস্যুতে গুরুত্বারোপের মাত্রা কিছুটা কম ছিল, কারণ তার বৈদেশিক নীতিতে অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। তবে, যদি এই নীতি পুনরায় কার্যকর হয়, তবে মানবাধিকার প্রশ্নে চাপ কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত নয় যে তার প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকার ইস্যুতে নরম অবস্থান নেবে, কারণ মার্কিন কংগ্রেস এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে সক্রিয় থাকতে পারে এবং বাংলাদেশকে জবাবদিহিতার আওতায় রাখতে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। বাংলাদেশের ওপর এই কূটনৈতিক চাপের ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহায়তার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেয়, তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। এই চাপ উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিদেশি সহায়তার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বাংলাদেশের জন্য মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এটি বাংলাদেশের জন্য কিছু জটিলতা তৈরি করতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভারতকে একটি কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিল, বিশেষত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে প্রতিহত করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে একটি মজবুত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এই অঞ্চলকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাতে পারে। ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যদি ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আরও শক্তিশালী হয়, তবে বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যদি তারা একসঙ্গে কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে নেওয়া নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে কিছু কূটনৈতিক সমন্বয় করতে বাধ্য করতে পারে, যা অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থে প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে, চীনের সাথে বাংলাদেশের গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো বড় প্রকল্পগুলো ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রশাসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নজরে আসতে পারে। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হবে, যেখানে একদিকে চীনের সাথে বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত সহযোগিতা বজায় রাখতে হবে এবং অন্যদিকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের সমন্বয় করতে হবে। এই ভূরাজনৈতিক জটিলতা বাংলাদেশের আঞ্চলিক কূটনীতিতে নীতিগত সিদ্ধান্তকে আরও সংবেদনশীল করে তুলবে। দেশটির জন্য কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটি গভীর মানবিক এবং কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে বাধ্য করেছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়ার ফলে বিশাল মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের সরকার এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এই সংকটের সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যে সহায়তা প্রদান করেছে, তা ছিল কিছুটা সীমিত এবং তার প্রশাসনের মনোভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে মানবিক সহায়তার জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল, কিন্তু ট্রাম্পের প্রশাসন মানবাধিকার ইস্যুতে ততটা সক্রিয় ছিল না যতটা পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো ছিল। ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির আওতায়, মার্কিন সরকারের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রকল্পের জন্য তহবিল কমানো হয়েছিল। এর ফলে, রোহিঙ্গা সংকটের মতো বৃহৎ মানবিক সমস্যার সমাধানে মার্কিন সহায়তা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে খুব বেশি আগ্রহী ছিল না, যা রোহিঙ্গাদের প্রতি অবহেলার এবং তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাসের সম্ভাবনা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির হোস্ট করছে, এবং আরও অনেক সহায়তা, যেমন খাদ্য, পানীয় জল, স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষা, এসব শরণার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের মানবিক সহায়তা হ্রাস পায়, তবে বাংলাদেশের ওপর এই চাপ আরও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের সরকারকে এ সমস্যার সমাধানে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আরও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। এই সংকটের সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নকে সহায়ক করার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি, এবং ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি, যা বাস্তবমুখী এবং জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, বাংলাদেশের জন্য কিছু সম্ভাব্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি বিশ্বব্যাপী এক ধরনের নতুন কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হতে পারে, যেখানে উন্নত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ কীভাবে এই নীতির মাধ্যমে সুবিধা নিতে পারে, তা ভেবে দেখলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল উঠে আসে। প্রথমত, বাংলাদেশ যদি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তার বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি আরও শক্তিশালী করতে চায়, তবে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প, কৃষি এবং অন্যান্য রপ্তানিকারক খাতগুলোকে মার্কিন বাজারে প্রবেশের সুবিধা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানির মধ্যে পোশাক শিল্প অন্যতম এবং যুক্তরাষ্ট্র এই খাতটির একটি বড় গ্রাহক। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আমেরিকান বাজারে ব্যবসার পরিবেশ আরও সহজ এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠলে, বাংলাদেশ রপ্তানি বৃদ্ধি এবং মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন সুযোগ পেতে পারে। বিশেষ করে, মার্কিন “চীন-বিরোধী” নীতির কারণে বাংলাদেশ চীনের পাশাপাশি ভারসাম্য রেখে মার্কিন পণ্য ও সেবা বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ট্রাম্পের প্রশাসনের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ইস্যুতে। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের পুনরুজ্জীবনের ফলে বাংলাদেশ নিরাপত্তা এবং সামরিক সহযোগিতায় একটি ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর, পাকিস্তান, এবং আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায়। যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বে জড়িয়ে পড়ে, তবে এটি দেশটির আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসন যদি দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক এবং কূটনৈতিক শাখায় বাংলাদেশকে একটি বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করে, তবে বাংলাদেশকে এর নিরাপত্তা সহযোগিতার সুবিধা বাড়ানোর সুযোগ থাকতে পারে।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব থাকলেও, এটি “আধুনিক প্রেক্ষাপটে বাস্তবমুখী কূটনীতি” হতে পারে। অর্থাৎ, বাংলাদেশকে আরও অগ্রসর হতে হবে তার অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারগুলির প্রতি মার্কিন কূটনীতিকদের চাহিদা অনুযায়ী। একটি সমন্বিত এবং বাস্তবমুখী কৌশল গ্রহণ করলে, বাংলাদেশ একদিকে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে, অন্যদিকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সর্ম্পক বাড়াতে পারবে। বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত কৌশল হবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্র, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা, যেখানে মার্কিন নীতির সুবিধা গ্রহণ করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে দিতে পারে, যা সরাসরি বাংলাদেশের জন্যও প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি, যা বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার নীতির মূল প্রতিফলন, দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশ, জন্য এক ধরনের নতুন কৌশলগত সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তবে এই প্রভাবগুলোর ধরন এবং পরিমাণ বাংলাদেশ কীভাবে প্রস্তুতি নেবে এবং কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তার ওপর নির্ভর করবে। যতটা সম্ভব, বাংলাদেশকে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা শক্তিশালী করার সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্প, কৃষি রপ্তানি, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেতে পারে। একই সঙ্গে, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। অপরদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ বৈশ্বিক ইস্যুগুলিতে মার্কিন সরকারের অবস্থান থেকে বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাংলাদেশকে মানবাধিকার এবং শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলিতে উন্নতি সাধন করতে হবে, যাতে মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে চাপ হ্রাস পাওয়া যায় এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহায়তা অর্জন সম্ভব হয়। অতএব, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেশটি ট্রাম্পের নীতি অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ করুক, যেখানে জাতীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা হবে। বাংলাদেশের সরকার যদি এসব পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নেয় এবং কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে তা দেশের জন্য বড় ধরনের সুবিধা বয়ে আনতে পারে।
লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।
এইচআর/এএসএম