মাহবুব নাহিদ: তারেক রহমানের কৃষি ভাবনার বিশালতা আমাদের সামনে এমন এক সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন তুলে ধরে, যা শুধু কৃষি খাতের উন্নতি নয়, বরং কৃষকদের সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই স্বপ্নে কৃষকরা শুধু উৎপাদনকারী নন, তাঁরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি। তারেক রহমানের এই ভাবনায় আমাদের দেশের কৃষকদের একটি নতুন দিগন্ত দেখার আশা জাগে—একটি এমন দেশ, যেখানে কৃষকেরা তাঁদের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন পান, এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে যে কৃষি বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তা আজও এক জীবন্ত উদাহরণ। তিনি নিজ হাতে কোদাল তুলে খাল খননের মাধ্যমে দেশের সেচ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করে তুলেছিলেন। তাঁর এই কর্মপ্রচেষ্টা বাংলাদেশের কৃষি খাতকে শুধু শক্তিশালী করেই থেমে থাকেনি, বরং কৃষকদের জন্য এটি একটি গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের কৃষকদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষি নিয়ে নানান দিক আলোকপাত করেন। তৃণমূলের প্রত্যেকটা মানুষের পছন্দের নেতা তারেক রহমান সুদূর বিদেশে অবস্থান করেও দেশকে নিয়ে দেশের কৃষিখাত নিয়ে এত চমৎকারভাবে ভেবেছেন যা আসলেই আমাদেরকে অবাক বিস্ময়ে রাঙিয়ে দেয়। তিনি কৃষক দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কৃষকদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যেতে, তাদেরকে নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে এবং বিএনপির সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে। এটাই প্রমাণ করে যে কৃষকরা এদেশের শিকড় তা তিনি খুবই গুরুত্বসহকারে উপলব্ধি করেন।
তারেক রহমান তাঁর রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা রূপরেখায় কৃষি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, কৃষক শুধু খাদ্য উৎপাদনকারী নন, বরং দেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম স্তম্ভ। তাই তাঁর লক্ষ্য কৃষি খাতের উন্নতি এবং কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যেন তাঁরা তাঁদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পান। তাঁর নির্দেশনায় সেচ ও খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় চালুর মাধ্যমে সেচের পানির অভাব দূর করা হবে, যা শহিদ জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত উদ্যোগের ধারাবাহিকতা হিসেবে বিবেচিত। এই কার্যকর সেচ ব্যবস্থা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে কৃষকদের জন্য সমবায় ভিত্তিক চাষাবাদের একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে, যা দেশের গরীব কৃষকদের আর্থিক সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তিনি জানেন, অনেক কৃষক তাঁদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পান না এবং কৃষির অবকাঠামো সুবিধার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাঁর এই উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকরা অতিরিক্ত পানি সেচে ব্যবহার না করে সঠিকভাবে তা কাজে লাগাতে পারবেন এবং ফসল উৎপাদনের খরচ কমবে। তিনি চান, দেশের প্রতিটি কৃষক যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন এবং তাঁদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারেন।
তারেক রহমান কৃষি খাতে জিডিপির ৮% বরাদ্দ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা সরাসরি কৃষকদের কাজে লাগবে এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। এই বরাদ্দ কৃষকদের সারের ভর্তুকি, উন্নত বীজ সরবরাহ এবং সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তিনি চান, এই সুবিধাগুলো যেন সরাসরি কৃষকের হাতে পৌঁছায় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তারেক রহমান শুধু কৃষকদের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্যও সহায়ক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। তিনি চান, সিন্ডিকেট এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব দূর করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য যেন বাজারে থাকে এবং সাধারণ মানুষ সঠিক দামে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের কৃষি এবং বাজার ব্যবস্থা উভয়ই সুষম উন্নয়ন লাভ করবে।
কৃষকদের জন্য খাস জমি ব্যবহার করে ফসল মাড়াইয়ের জায়গা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কৃষি বিমার সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারেক রহমান। তাঁর এই পরিকল্পনা কৃষকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে এবং তাঁদের জীবনযাত্রা স্থিতিশীল রাখবে। এছাড়া, বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্যভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সংরক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর, যা ফসল নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করবে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।
কৃষি খাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তারেক রহমান কৃষিতে রপ্তানিমুখী ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াতে চান। তিনি মনে করেন, কৃষিক্ষেত্রে শিল্পায়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। তাঁর এই চিন্তা দেশের কৃষি খাতকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যাবে, যেখানে কৃষকদের জন্য যথাযথ সুরক্ষা ও উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
তারেক রহমানের এই ভাবনা আমাদের একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের দিশা দেয়, যেখানে কৃষকরা গর্বিতভাবে নিজেদের দেশের মেরুদণ্ড হিসেবে দেখতে পাবেন। বিএনপি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবে এবং তাঁর এই উন্নয়ন চিন্তা বাস্তবায়িত হবে, তখন বাংলাদেশ কেবল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং কৃষিখাতে উদাহরণ হিসেবে বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরা হবে। দেশের প্রতিটি কৃষক, প্রতিটি মাঠে কাজ করা শ্রমিক তখন গর্বিতভাবে নিজেদের এই সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখতে পাবেন।
লেখক: মাহবুব নাহিদ
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
(খোলা কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি২৪লাইভ ডট কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)