সড়কে নিরাপত্তা বিধানে দেশের সব মহাসড়কে তিন চাকার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান চলাচল বর্তমানেও নিষিদ্ধ রয়েছে কিন্তু এটি কার্যকর নেই। বর্তমানে আইন অমান্য করে জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান চলাচল বহুগুণ বেড়েছে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধিসহ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।
হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২২ মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন (ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেশের বেশিরভাগ মহাসড়কে চলছে তিন চাকার যানবাহন। শুধু যে চলছে তা নয়, মাঝেমধ্যে উল্টোপথে চলছে এসব যানবাহন। কোনও ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না এসব যানবাহনের চালকরা। যত্রতত্র যাত্রী উঠানো-নামানো ও ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলছেন তারা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষজন।
এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সব প্রধান মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে সেই নির্দেশকে আরও জোরদার করেন হাইকোর্ট। কিন্তু, সমস্যা দেখা দেয় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা নিয়ে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ যে ৩ চাকার যানবাহনের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বিগত বছরগুলির তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। দুর্ঘটনার কারণগুলো ভালোভাবে চিহ্নিত, সংশোধনের ব্যবস্থার অনুমোদন ও সময়ে সময়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবুও প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। প্রাসঙ্গিক আইন বাস্তবায়নের সক্ষমতার অভাবে বা কার্যকর করতে অনিচ্ছার কারণে প্রশাসনের সৎ উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে ৩ চাকার যানবাহনের সংখ্যাও সমান হারে বেড়েছে। কিন্তু, শুধু অনুমোদিত ৩ চাকার যান এ সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলেনি। রাস্তা ও প্রধান মহাসড়কগুলোতে চলছে বিভিন্ন আকৃতির, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বিভিন্ন উপায়ে চালিত যানবাহন। এসব অননুমোদিত যানবাহনের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সড়ক নিরাপত্তা বিধানে সব জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে, তা বর্তমানেও নিষিদ্ধই থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এছাড়াও জানান আইন অমান্য করে মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল করলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপের নির্দেশ প্রদান করেন হাইকোর্ট। যার ফলে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যাটারিচালিত অটোচালকরা। এই মূহুর্তে সারাদেশে মহাসড়ক ব্যাতিত অন্যান্য সড়কে তিনচাকার যানবাহন চলাচলের অনুমতি প্রধান করে কঠোর অবস্থানে যাওয়া উচিৎ প্রশাসনের। এ পরিস্থিতিতে কোনো শিথিলতা গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত । আইন ও বিধিবিধান কঠোর ও নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করা উচিত, কারণ এটা মানুষের জীবনের প্রশ্ন।
লেখক:
তাসনিমুল হাসান প্রান্ত
সাংবাদিক ও কলামিস্ট