আগেরবার তার কোচিংয়েই লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ এবং আবাহনীকে পিছনে ফেলে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
এবার শেষ পর্যন্ত কি হবে, তার উত্তর দেবে সময়। তবে এবারও শিরোপার হাতছানি আছে সোহেল ইসলামের শিষ্যদের সামনে। নেট রানরেটে আবাহনীর চেয়ে পিছিয়ে থাকায় টেবিলে অবস্থান দ্বিতীয় দেখালেও রাউন্ড রবিন লিগ শেষে পয়েন্ট সংগহে আবাহনীর সমান (১১ খেলায় ১০ জয় নিয়ে ২০) সমান শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
খুব জটিল ও গোলমেলে অংক বা সমীকরণ নেই, সোজা হিসেব-পয়েন্টে শীর্ষে থাকা আবাহনী আর শেখ জামাল ধানমন্ডি সমান অবস্থানে। এখন এই দু’দলের যে সুপার লিগে সব ম্যাচ জিতবে, সেই হবে চ্যাম্পিয়ন।
যেহেতু প্রথম লিগে আবাহনীকে একমাত্র পরাজয়ের তেতো স্বাদ দিয়েছে শেখ জামালই, তাই সুপার লিগেও নিজেদের ফেবারিট ধরেই যাত্রা শুরুর কথা ভাবতে পারে সোহেল ইসলামের শিষ্যরা।
কিন্তু কোচ সোহেল ইসলাম সতর্ক-সাবধানী। কোনো কিছুকেই ‘গ্যারান্টেড’ ভাবতে নারাজ শেখ জামাল কোচ। পয়েন্টের হিসেবে আবাহনীই শুধু আপনার দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সমান সমান। বাকিরা তথা লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ (৪ পয়েন্ট পিছনে), প্রাইম ব্যাংক (৬ পয়েন্ট কম), মোহামেডান (৭ পয়েন্ট কম) ও গাজী গ্রুপ (৯ পয়েন্টের ব্যবধান) বেশ পিছনে।
তাহলে কি সুপার লিগে আবাহনীর সাথেই শেখ জামালের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে? আবাহনীর সঙ্গে ম্যাচটিই কি তাহলে সুপার লিগে আপনার দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তথা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ হবে বলে মনে করেন?
জাগোনিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ জামাল কোচ সোহেল ইসলামের সাজানো-গোছানো জবাব, ‘না, না। মোটেও তা নয়। পয়েন্টের ব্যবধান যাই থাকুক না কেন, সুপার লিগে সব দলই সমান শক্তিশালী। সেখানে কোনো ছোট বড় দল নেই। সবাই সমান। কাউকে ছোট ও খাট করে দেখার সুযোগ নেই। এখন অবস্থান যেমনই থাকুক না কেন, সুপার লিগে এক ম্যাচ হারলেই পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই সুপার লিগের পুরোটাই আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব কটা দলের সাথে খেলাকেই আমি সমান গুরুপূর্ণ মনে করি। এবং জানি চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে একটি ম্যাচকে হালকাভাবে নেয়ার কোনই সুযোগ নেই।’
প্রথম পর্ব কেমন কাটলো? সোহেল ইসলামের সন্তুষ্টিমাখা জবাব, ‘মাশআল্লাহ ভালো। মোটামুটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে দল সাজানো হয়েছিল, টিম স্ট্র্যাটেজি তৈরি করার পাশাপাশি একাদশ সাজানো হয়েছে, ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করেছি, সেগুলো মোটামুটি ভালই ক্লিক করেছে। এখন সুপার লিগ ভাল কাটলেই ভাল।’
কিন্তু সুপার লিগেতো আপনার দল পুরো শক্তিতে মাঠে নামতে পারবে না। আয়ারল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ১ মে লন্ডন চলে যাবেন প্রথম একাদশের তিন নির্ভরযোগ্য পারফরমার তাওহিদ হৃদয়, পেসার এবাদত হোসেন ও সীমিং অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তাদের অভাব কতটা অনুভব করবেন?
সোহেলের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘অবশ্যই তাদের অভাব অনুভব করবো। তিনজনই আমার ‘কী’ প্লেয়ার। এর মধ্যে তরুণ ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়কে খুব বেশি করে মিস করবো। মিডল অর্ডারে দারুন ব্যাটিং করেছে সে। তার জায়গা ভরাট করা কঠিন হবে।’
সত্যিই তাই। আবাহনীর বিপক্ষে কঠিন-স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়েও তাওহিদ হৃদয় বুক চিতিয়ে লড়াই করে দল জেতানো ব্যাটিং করেছে। আবাহনীর বিপক্ষে শেরে বাংলায় ৭৭ বলে ৭২ আর বিকেএসপিতে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ১১৮ বলে ৯৮ রানের হার না মানা ইনিংস দুটিই ‘বিগ ম্যাচে’ রান তাড়া করে শেখ জামালকে পৌঁছে দিয়েছে জয়ের বন্দরে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং শেখ জামালের একটা নির্ভরতার জায়গা তৈরি হয়েছিল। তাই এ তরুণ সম্পর্কে কোচ সোহেল ইসলামের মূল্যায়ন, ‘সত্যি বলতে কি, তাওহিদ হৃদয়কে খুব মিস করবো। তার জয়গা পূরণ করাও হবে কঠিন।’
‘এ তরুণ ব্যাটার বেশ কতগুলো ম্যাচে সাহস, আস্থা ও দায়িত্ব নিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। দলকে লক্ষ্যেও পৌঁছে দিয়েছে। আর এবাদত আর মৃত্যুঞ্জ না থাকায় পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টটাও কমজোরি হবে। তাদের জায়গাও ভরাট করা সহজ হবে না। তবে কিছুই করার নেই। যা আছে, তা নিয়েই খেলতে হবে। যারা থাকবে তাদের দিয়েই দল সাজাতে হবে। যে দল থাকবে, যাদের পাব, তাদের দিয়েই সুপার লিগ খেলতে হবে। আমি তাদের কাছেই সেরাটা পেতে চাই।’
এআরবি/আইএইচএস