# সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেওয়ার অভিযোগ গণপূর্তের বিরুদ্ধে
সর্বনিম্ন দরদাতাকে প্রকল্পের কাজ না দিয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিয়ে আর্থিক লাভবান হওয়ার অভিযোগ উঠেছে গণপূর্তের বিরুদ্ধে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম গণপূর্ত-১ বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সাড়ে তিন কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে দরপত্রের মূল্যায়ন করার অভিযোগ তোলেন সর্বনিম্ন দরদাতাদের কয়েকজন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের ৫০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট ও ১০ বেডের আইসিইউ/সিসিইউ ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম গণপূর্ত-১ বিভাগের অধীন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার প্রকল্পটির ইজিপিতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডার প্যাকেজ নম্বর- ‘ইই/পিডব্লিউডি/চিটিজি-১/আইসিইউ/এডিবি/ডব্লিউডি-৬/ওটিএম/২০২১-২০২২’।
আরও পড়ুন>> অপরাধ প্রমাণ হলে ৫ বছরের জেল, জরিমানা ৫০ লাখ টাকা
গত বছরের ১৪ নভেম্বর টেন্ডারে অংশগ্রহণের শেষ দিন ছিল। টেন্ডারে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে মেসার্স মহসীন অ্যান্ড ব্রাদার্স ২ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৭ টাকা, মেসার্স শাহ জব্বারিয়া কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং ২ কোটি ৬৮ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৬ টাকা, ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২ কোটি ৭১ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৪ টাকা, গ্যালাক্সি অ্যাসোসিয়েটস ২ কোটি ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, মা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ১৯২ টাকা এবং মেসার্স লাকি এন্টারপ্রাইজ ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৩৬ টাকায় দরপত্র জমা দেন।
দরপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার ব্যবধান প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি। অন্যদিকে, দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার ব্যবধান সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি। আবার তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে চতুর্থ সর্বনিম্ন দরদাতার ব্যবধান ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো।
আরও পড়ুন>> ৫ প্রকল্পে বাংলাদেশকে আড়াই বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
যাবতীয় কার্যক্রম শেষে সম্প্রতি তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয় গণপূর্ত বিভাগ। এনিয়ে দরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ তোলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স শাহ জব্বারিয়া কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং।
গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিত অভিযোগ দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দরপত্র জমার পরে দরপত্রে প্রদত্ত দরে কাজটি কীভাবে সম্পাদন করা হবে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টে (ই-জিপি) তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সর্বনিম্ন ঠিকাদাররা নির্ধারিত সময়ে ই-জিপিতে ব্যাখ্যা দেন। পরে প্রস্তাবিত দরের চেয়ে দরপত্রে প্রদত্ত কম দরে কাজটি করার সক্ষমতা বিষয়ে চট্টগ্রাম গণপূর্ত সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঠিকাদারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রকল্পের ড্রয়িং, ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন অনুসারে কাজটি করার জন্য মেসার্স শাহ জব্বারিয়া কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং প্রস্তুত বলেও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে জানানো হয়।
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের সহায়তার প্রশংসা শেখ হাসিনার
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে কেন অযোগ্য করা হয়েছে সেটার ব্যাখ্যা দেয়নি গণপূর্ত বিভাগ।একইভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ পরিপন্থি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পে তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ। তিনি বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে অনেক ঠিকাদার কম রেটে কোটেশন দিয়েছেন। কিন্তু তারা এ রেটে কাজ শেষ করতে পারবেন না। এটা মূল্যায়ন করেই তৃতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন>> সড়ক নিরাপদে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন: কাদের
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দুই টাকার কাজ পঞ্চাশ পয়সায় করতে চাওয়ার মধ্যে তো দূরভিসন্ধি রয়েছে। তারপরও কাজটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে হচ্ছে। আমরা দরপত্র মূল্যায়ন করে এডিবিতে পাঠিয়েছি। এডিবির সম্মতিতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সাড়ে তিন কোটি টাকার বলে জানান তিনি।
এমডিআইএইচ/এমএএইচ/জেআইএম