মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
ভর্তা ও ভাজি খেতে কে না পছন্দ করে। তবে কর্মজীবীরা সারাদিন অফিস করার পর ভর্তা-ভাজি করা বেশ মুশকিল হয়ে ওঠে, এমনটাই বলছিলেন সামিয়া জাহান। স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি ভর্তা ও ভাজি খেতে এসেছেন বাঙালিয়ানা ভোজ মিরপুর শাখায়। কর্পোরেট জব করে বাসায় ভর্তা ও ভাজির আয়োজন তার খুব একটা করা হয় না।
ভর্তা সমেত ভাতের লোকমা মুখে দিতেই চোখে মুখে তার একটা তৃপ্তির আভা খেলা করছিলো। মা বেঁচে থাকতে নানা রকম ভর্তা মজা করে খেতাম। মা সব আয়োজন করতেন। চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভাতের সঙ্গে যে ৫ খাবার খেলে বিপদ হতে পারে
কেবল সামিয়া নয়, চারপাশে তাকিয়ে এমন আরও অনেক পরিবারকে দেখছিলাম। তারা সবাই বেশ আয়েশ করে ভর্তা দিয়ে ভাত অথবা খুদের ভাত খাচ্ছিলেন ও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিলেন।
কথা হলো তাদের অনেকের সঙ্গেই। প্রবাসী দম্পতি মুনা আর তাহসান। ভর্তা ভাত খেতে তারাও এসেছেন বললেন, ‘যেখানেই থাকি না কেন বাঙালির ভর্তা ও ভাজির আয়োজন সবচেয়ে সেরা। দেশে আসলে খেতে ভুল করি না একদম। আর এখানে তো রীতিমত ভর্তার বুফে সাজিয়েছে।’
মুনার এমন কথার সঙ্গে সামিন যোগ করলেন, ‘খাবারের মান বেশ ভালো। কেবল ব্যবসা নয়, এরা ভর্তার আসল স্বাদ বজায় রাখতে চেষ্টা ত্রুটি করেনি একটুও।’
আরও পড়ুন: হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে যা করবেন
কিছু ছাত্র-ছাত্রীদেরও দেখা মিললো। তাদের যুক্তি অন্যরকম। ১৬৯ টাকায় এমন খাবার তো নেই বললেই চলে। হোটেলে দুই টুকরো গরু ভুনাই তো ১৫০ টাকার মতো, সেখানে ১১ পদের ভর্তা, অনলিমিটেড ভাত, ডাল ১৬৯ টাকায়। এ যেন এক ভর্তার বুফে রেস্টুরেন্ট।
আর এমন চমকপ্রদ ভর্তার পসরা সাজিয়েছে বাঙালিয়ানা ভোজ। খোদ ঢাকাতেই তাদের চারটি শাখা। পান্থপথ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও বসুন্ধরা যে কোনোটায় গেলেই ভর্তা দিয়ে পেটপূজা সারতে পারবেন। চাইলে পার্সেলও নিতে পারবেন।
বাঙালিয়ানা ভোজের ১৬৯ টাকার প্যকেজ নানা সময়ে নানা রকম ভর্তা দিয়ে সাজানো হয়। তাদের ভর্তা-ভাজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- টমেটো ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা, কাঁচা কলা ভর্তা, কচু ভর্তা, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, মিষ্টি কুমড়া ভর্তা, শাক ভাজি, মিক্স ভেজিটেবল, করলা ভাজি, বেগুন ভাজি, সিম ভর্তা, ডাল ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা, টাকি মাছ ভর্তা, শুটকি ভর্তা ও ইলিশ ভর্তা।
আরও পড়ুন: বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে খাবার নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
এগুলো পৃথকভাবে কিনতে গেলে খরচ পড়বে ৩০-৭০ টাকা। একজনের জন্য যতটুকু ভর্তা দেওয়া হয়, তা যথেষ্ট। কারণ অনেকে ভর্তার সবটা না খেয়েই তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। তবে আপনি যদি কোনো ভর্তা শেষও করে ফেলেন পরবর্তী সময়ে চাইলে আবারও আপনাকে দেওয়া হবে সেটি, সেক্ষেত্রে কোনো এক্সট্রা চার্জ যুক্ত হবে না।
মিরপুর ১০ থেকে ১ নম্বরের দিকে যেতে কিছুটা পথ পার হলেই হাতের বামে বাঙালিয়ানা ভোজ এর দেখা মিলবে। সরু গলি দিয়ে ২য় তলায় উঠতেই সুন্দর সাজসজ্জা চোখ পড়বে। অবশ্য নানা জায়গায় নানা রকম খাবারের ছবি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যের খোরাক মিটাবে।
শুধু ভর্তাই নয় বরং বাঙালিয়ানা ভোজ সব ধরনের খাবারের সমাহার রেখেছে। যার যেটা পছন্দ। বিরিয়ানিও পাবেন সেখানে। যেমন- বিফ কাচ্ছি (চিনিগুঁড়া) ২৫০ টাকা, মাটন দম বিরিয়ানি ৩০০ টাকা, হায়দ্রারাবাদি মাটন ৩০০ টাকা, চিকেন ২৫০ টাকা, বিফ দম বিরিয়ানি ৩০০ টাকা ও চিকেন দম বিরিয়ানি ২৫০ টাকা।
আরও পড়ুন: গরমে প্রাণ জুড়াবে ম্যাংগো মাস্তানি
এছাড়া তরকারি আইটেম হিসেবে আছে গরুর লাল ও কালা ভুনা ২০০ টাকা, গরুর চুইঝাল ২২০ টাকা, হাঁসের মাংস ২৫০ টাকা, চিকেন ঝাল ফ্রাই ১৭০ টাকা, চিকেন রোস্ট ১৭০ টাকা ও সরিষা ইলিশ ২৫০ টাকা। সন্ধ্যায় জল খাবার হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে ফুলকো লুচি, আচারি চিকেন, কাবুলি চানা মাসালা, আলুর দম ও মিক্স সবজি ২১৯ টাকা।
নতুন সংযোজন হিসেবে আছে বিফ রেজালা, চিকেন, ডিমের কোরমা, কাবুলি চানা মাসালা, প্লেন পোলাও, আমড়ার চাটনি, পায়েস, লেবু পানিসহ এই প্যাকেজ এর দাম মাত্র ৫৯৯ টাকা। সব খাবারের সঙ্গে ভ্যাটযুক্ত। আলাদা কোনো টাকা দিতে হবে না।
যাদের খিচুড়ি পছন্দ, তাদের নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। গরুর কালা ভুনার সঙ্গে ভুনা খিচুড়ি ২৫০ টাকা, মুরগি ভুনার সঙ্গে ভুনা খিচুড়ি ২২০ টাকা ও হাঁস ভুনার সঙ্গে ভুনা খিচুড়ি ৩০০ টাকা।
আরও পড়ুন: ম্যাংগো আইসক্রিম তৈরি করুন মাত্র ৩ উপকরণে
খাবার শেষে যারা ডেজার্ট খেতে চান, তাদের জন্য আছে ফিরনি ,দই চিড়া, রসগোল্লা, ফালুদা, লাচ্ছি, কফি, পুডিং, পিঠা ইত্যাদি। দাম ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
একটি ফালুদা নিলে দুজনে অনায়াসে খেতে পারবেন। বাঙালিয়ানার এক কর্মকর্তা জানালেন, তাদের ফালুদা বেশ জনপ্রিয়। ঈদ ছাড়া প্রতিদিনই দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে বাঙালিয়ানা ভোজ।
জেএমএস/জিকেএস