বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের রক্তের মর্যাদা রক্ষা করা আবশ্যক। তাদের রক্তের প্রতি অমর্যাদা, অবহেলা বা অবিচার করা জায়েজ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) জুমার বয়ানে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শহিদদের জন্য দোয়া চাওয়া হোক বা না হোক সব সময় তাদের জন্য দোয়া করা উচিত। শহিদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য যারা শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ করে তারা হলো মূল শহিদ। এছাড়াও ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের জন্য যারা আন্দোলন করে অন্যায়ভবে জুলুম করে তাদেরকে হত্যা করা হলে তারাও শহিদ হিসাবে গণ্য হবে। এই শহিদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাদের আন্দোলনের প্রতি, উদ্দেশ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের রক্তের মর্যাদা রক্ষা করা আবশ্যক। তাদের রক্তের প্রতি অমর্যাদা, অবহেলা বা অবিচার করা জায়েজ নেই। বৈষম্য দূরীকরণের নামে নতুন বৈষম্য তৈরি করা অথবা বৈষম্য শব্দের অসৎ ব্যবহার করা শহিদদের রক্তের প্রতি অবিচারের নামান্তর।
বৈষম্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্য কাকে বলে? সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি দুই পক্ষ সমান অধিকারের প্রাপ্য হয় তাহলে একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে দেয়া বৈষম্য। কিন্তু যার অধিকার নেই, অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমান পাওয়ার দাবি নাই সেক্ষেত্রে সমতা বিধান করা বৈষম্য দূরীকরণ নয়। এজন্যই জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস প্রতিষ্ঠার নামে বিভিন্ন মিডিয়া ও সেবাসংস্থার ট্রান্সজেন্ডার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা জায়েজ নেই।
তিনি বলেন, আজকে লক্ষ্য করলাম ইসলামের প্রতি অনুরাগী দাবিদার একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনে জেন্ডার সমতা বিধান দায়িত্বশীল বা সম্পাদক নামে পথ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের নামে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা মানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সাথে বেইমানি করা।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার, সকল রাজনৈতিক দল এবং মুসলিম-হিন্দুসহ দেশের সকল নাগরিক বিপ্লবে শহিদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিপ্লবের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। যদি না করে, তাহলে আল্লাহ না করুন আল্লাহর গজব আবার হয়তো এই দেশের ওপর চেপে বসবে। এজন্য আমাদের সকলকে সতর্ক হয়ে বিপ্লবের উদ্দেশ্য সফল করতে হবে।
এদিন আলোচনার শুরুতে তিনি সূরা আল ইমরানের ১৩৩ ও ১৩৫ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন, এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে তার ক্ষমা এবং জান্নাতের প্রতি দ্রুত ধাবমান হওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এই জান্নাত যার প্রশস্ততা আসমান এবং জমিনের সমান, এটি মুত্তাকিনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
এরপর আয়াতে মুত্তাকিনদের কয়েকটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে—
১. যারা সুখ এবং দুখ, ভালো এবং মন্দ সকল অবস্থায় আল্লাহর পথে ব্যয় করে। আল্লাহর পথে ব্যয় করার অর্থ নেক কাজে ব্যয় করা। তবে এই ক্ষেত্রে ইসরাফ ও অপব্যয় থেকে বিরত থাকতে হবে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আল্লাহর পথে দান অব্যাহত রাখতে হবে। আর গুনাহের কাজে ব্যয় করা সর্বাবস্থায় নাজায়েজ।
২.যারা রাগ ক্ষোভ ও ক্রোধ দমন করে। মানুষ মাত্রই তার মধ্যে রাগ ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু সেই রাগ যেন আমাকে নিয়ন্ত্রণ না করে। মুত্তাকী হিসেবে আমার কর্তব্য হলো, নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। রাগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে অনেক বর্ণনা এসেছে। রাগ হলো শয়তানের আসর। এজন্য রাগ হলে অবস্থার পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। ওযু করা নামাজ পড়া ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে রাগকে দমন করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহর ভয়কে নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে।
৩. যারা মানুষকে ক্ষমা করে। ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। অন্যায়কারী দুঃখ প্রকাশ করলে অবশ্যই ক্ষমা করতে হবে। দু:খ প্রকাশ না করলেও ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ক্ষমাকারী আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হবে। অন্যদিকে অপরাধকারীকেও অন্তর থেকে অনুতপ্ত হতে হবে। আজকাল দুঃখ প্রকাশ করা বা সরি বলা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে সরি এর ওজন কমে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে বা অন্যায় করে সরি বলা নিন্দনীয় কাজ।
৪.এবং যারা ইহসান করে। আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন। ইহসান মানে হচ্ছে: ভালো কাজ করা, উত্তম রূপে কাজ করা এবং মানুষের উপর দয়াশীল থাকা। যখনই আমি যে কাজ করব সেটা সুন্দর এবং উত্তম উপায় করতে হবে।
৫. এরপরের গুণটি সবার জন্য খুব জরুরি। তাহল, কখনো কোন অন্যায় বা ভুল হয়ে গেলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। সেই অন্যায় বা ভুল এবং গুনাহের উপরে জমে না থাকা। কোরআন এবং হাদিসে ইস্তেগফারের অনেক বাক্য এসেছে, সেগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এবং অনুতপ্ত হয়ে বারবার পড়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। পাশাপাশি তাওবার পরে পুনরায় সেই গুনাহ না করা।
বাঁধন/সিইচা/সাএ